অশ্রু ঝরার দিনে

 


জোছনা প্লাবিত রাতের ধবধবে শাদা আকাশ। কোথাও যেন ডাহুক ডাকছে। বুনো ফুলের গন্ধে বাতাস আশ্চর্যরকম ভারী। চাঁদের আলোতে নদী পাড়ের বালিগুলো রূপো চূর্ণের মতো ঝিকমিক ঝিকমিক করছে। থেকে থেকে কানে আসছে কিছু পাতি শেয়ালের ডাক। এসবের বাইরে পুরো দুনিয়াজুড়ে যেন গা ছমছমে নীরবতা। কোথাও কোনো সাড়াশব্দের বালাই নেই।


জোছনার জোয়ার ভেদ করে, গ্রামীণ মেঠো পথের ধুলো উড়িয়ে, বুনো ফুলের বুনো গন্ধকে পাশ কাটিয়ে দুজন মানুষ গন্তব্যে ফিরছে। দুজন বলা কি ঠিক? ওদের সাথে তো আরও একজন আছে। চাদরে মোড়ানো বরফ-শীতল আস্ত একখানা শরীর—নড়চড়বিহীন। তাকেও কি গোনায় ধরা যায়? জীবনের সম্ভাব্য সকল পাঠ চুকিয়ে যে পাড়ি জমিয়েছে অন্য জগতে, এই জগতের বাসিন্দাদের তালিকায় তার নাম উঠানো উচিত হবে?


মাঝে মাঝে বলদগুলো চেঁচিয়ে উঠছে। গোঙানি উঠলেই তাদের পিঠে বসে যাচ্ছে শাদু মিয়ার বেতের বাড়ি। এই জোছনা মুখরিত রাতে, অরণ্যের এই সবু পথ চিনে চলতে বলদগুলোর বিশেষ অসুবিধে হবার কথা নয়। তবু পথ চলতে আজ তাদের রাজ্যের অনীহা। কে জানে, চাদরে মুড়ানো ওই যে নিথর শরীর, তার ভারে হয়তো তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে বারংবার। এ তার বয়ে নিয়ে যাওয়া কি এতোই সোজা?

Post a Comment

0 Comments